সরোজিনী নাইডুর সমকক্ষ আলি ভ্রাতৃদ্বয়ের জননী আবেদি বেগমের সংগ্রামের ইতিহাস আজ উপেক্ষিত
বঙ্গ রিপোর্ট ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে আজ উপেক্ষিত মুসলিম বিপ্লবীরা। সাম্প্রদায়িক মনোভাবে ইতিহাসের পাতা ছোট হয়ে এসেছে মুসলিম বিপ্লবীদের জন্য। স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবীদের অংশগ্রহণে তাঁদের মা, স্ত্রী, বোনেরা সব রকমভাবে সহোযোগিতা করত, উদ্বুদ্ধ করতো দেশকে ব্রিটিশ শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করতে। আবার অনেকে সরাসরি যোগ দিয়েছিল সরোজিনী নাইডু, সরলা দেবীদের সাথে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আবেদি বেগম।
বাই আম্মা (আবেদি বেগম) : প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ভ্রাতৃদ্বয় সওকাত আলি ও মহাম্মদ আলির জননী ছিলেন। ১৯২১-এর ডিসেম্বরে তার সন্তানদের বন্দিত্বের সংবাদ তিনি খুশি মনে গ্রহণ করেন। গুজব ছড়িয়েছিল যে তার পুত্র মহাম্মদ আলি রাজভিক্ষায় জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, তখন তিনি বলেছিলেন- “মহাম্মদ আলি আমার পুত্র, সে কখনোই ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে পারে না। যদি সে এটা করে থাকে, তাহলে আমার বুড়ো হাত তাকে দমণ করার জন্য যথেষ্ট।” তিনি নিজে চরকায় কাটা সুতার পোষাক পরতেন এবং অন্যদেরকেও খাদি পরতে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন এবং এটাকে তিনি ঈমানের অঙ্গ বলে মনে করতেন।
আবেদি বেগম (১৮৫০- ১৯২৪) মুসলিম মহিলাদের মধ্যে তিনি প্রথম যিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ব্রিটিশ রাজত্ব থেকে ভারতকে মুক্ত করার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি উত্তরপ্রদেশে ১৮৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। রামপুরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবদুল আলী খানকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তাঁদের একজন কন্যা এবং পাঁচ পুত্র ছিল। অল্প বয়সে স্বামীর মৃত্যুর পরে বাচ্চাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব তার উপর পড়ে। সংসারে অভাব থাকায়, তিনি তার বাচ্চাদের শিক্ষিত করার জন্য ব্যক্তিগত গহনাগুলিকে বিক্রি করেছিলেন। তিনি প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও তার সন্তানদের উত্তর প্রদেশের বেরেলি শহরে একটি ইংরেজি-মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করেছিলেন।
আবেদি বেগম রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন এবং খেলাফত কমিটিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯১৭ সালে, তিনি অ্যানি বেসেন্ট ও তার দুই ছেলেকে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
মহাত্মা গান্ধী তাঁকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতেন কারণ তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের সমর্থন প্রয়োজন মনে করেন। ১৯১৭ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের অধিবেশন চলাকালীন, তিনি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এবং জোরালো ভাষণ দিয়েছিলেন যা ব্রিটিশ ভারতের মুসলমানদের উপর একটা স্থায়ী প্রভাব ফেলে ছিল।
খেলাফত আন্দোলনের সমর্থনে তিনি পুরো ভারতজুড়ে ভ্রমণ করেছিলেন। খেলাফত আন্দোলন এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে আবেদি বেগম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি, মাওলানা হাসরাত মোহানী স্ত্রী বেগম হাসরাত মোহানী,বাসন্তী দেবী, সরলা দেবী চৌহধুরানী এবং সরোজিনী নাইডুর সাথে প্রায়শই মহিলা সমাবেশে বক্তৃতা দিতেন। বাল গঙ্গাধর তিলক প্রতিষ্ঠিত তিলক স্বরাজ তহবিলে অনুদান দেওয়ার জন্য মহিলাদের পরামর্শ দিতেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে ১৯২৪ সালে মৃত্যুর সক্রিয় ছিলেন। আবেদি বেগম ১৯২৪ সালের ১৩ই নভেম্বর ৭৩ বছর বয়সে মারা যান।
আবেদি বেগমের স্মরণে মহিলা কংগ্রেসের একটি টুইট
On #CongressFoundationDay remembering Abadi Bano Begum, who later came to be known in Indian history as ‘Bi Amma’ was one of the important voices of the freedom struggle. At the time, she was one of the first Muslim women to participate in Khilafat movement. pic.twitter.com/IWo4qMYgO6
— All India Mahila Congress (@MahilaCongress) December 28, 2018
আরো কয়েকজন মহিয়সী নারী:
মিসেস জুবাইদা দাউদি : মাওলানা সাফি দাউদির স্ত্রী ছিলেন।তিনি প্রাণপণে ব্রিটিশদের বিরোধীতা করেছিলেন এবং অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন। তিনি তার স্বামী, আত্মীয়-স্বজন এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে সমস্ত বিদেশি জামাকাপড় সংগ্রহ করে কংগ্রেস অফিসে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন জনসমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন এবং মহিলাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন। যখন স্কুল-কলেজের ছাত্ররা সরকারী স্কুল ছেড়ে দিচ্ছিল, তখন মাওলানা সাফি দাউদি একটি স্কুল চালু করেন। জুবাইদা দাউদি সেখানে ছাত্রদের দেখাশোনা করতেন এবং তাদের উৎসাহ দিতেন স্বাধীনতা সংগ্রামে।
এছাড়াও আসগারি বেগম, মাজিরা খাতুন, রাজিয়া খাতুন, জামিরা, লেডি মহাম্মদ সফি, খাদিমা বেগম, বেগম হাবিবুল্লা প্রমূখ মুসলিম নারী স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। পুরুষতান্ত্রীক নীতিহীণ সমাজ এইসব মহিয়সী নারীদের তাদের প্রাপ্য মর্যাদা না দিলেও, এদের কাহিনী চেপে রাখতে পারেনি আর সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না।